-রিয়াজ মজুমদার (বিশেষ প্রতিনিধি)
অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার লালমাই উপজেলার হাড়াতলি স্মৃতি স্তম্ভ ।১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার হাড়াতলী সম্মুখ যুদ্ধে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন ও একাধিক লোক প্রাণ হারান। এ সময় দেশে স্বাধীনতার জন্য শত্রæর সঙ্গে মুখামুখি যুদ্ধ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। অথচ তাঁদের জন্য নির্মিত স্মৃতিসৌধ ও স্মৃতি স্তম্ভ পড়ে আছে অযতœ-অবহেলায়। সম্মুখ যোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা রস্তম আলী সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে প্রতিদিন এই এলাকার লোকজন পাকিস্থানী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে মিছিল ও সভা করতে থাকেন। এ খবরটি স্থানীয় মুসলিম লীগের নেতা রাজাকার টুক্কু মিয়া ও তার অনুসারীদের মাধ্যমে লাকসামে অবস্থানরত পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর কর্তাদের কাছে পৌঁছে যায়।
১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর ক্যাপ্টেন মাহাবুব লালমাইতে পাকিস্তানি সৈন্যদের রেড দেওয়ার জন্য অবস্থান করছিল এই তথ্য পাকিস্তানি সৈন্যরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরে ক্যাপ্টেন মাহাবুবকে হামলা করার উদ্দেশ্যে পাক সেনারা মার্স করে লাকসাম থেকে গৈয়ারভাঙ্গা হয়ে লালমাইর পথে রওয়ানা হলে মুক্তিযোদ্ধারা আগাম তথ্য পেয়ে হাড়াতলী রাস্তার মাথায় সকাল নয়টাতে রেড করে, শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ স্থায়ী হয় তিন ঘন্টা, এতে শহীদ হন পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরীহ দুইজন শহীদ হন, পাকিস্তানি সৈন্য মারা যায় পনের জন, একই দিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পুনরায় যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি সৈন্যরা পিছনে হটে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, মনোরঞ্জন সিংহ, মোখলেছুর রহমান আলফু মোঃ হারুনুর রশীদ, জিন্নাত আলী । হাড়াতলী স্মৃতি স্তম্ভ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতি স্তম্ভ পুরো এলাকা ঝোপঝাড়ে ভরা। সামনে বাঁশঝাড়ের আগাছা ফেলে প্রবেশপথ বন্ধ রাখা আছে। বিগত দিনগুলোতে এই স্মৃতি স্তম্ভের কোন সংস্কার হয়নি। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, আমাদের নিজেদের অর্থায়নে স্মৃতি স্তম্ভ গুলো সংস্কার করে আসছি। সরকার সহযোগিতা করলে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও দৃষ্টি নন্দন করা যেতে পারে। লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, স্মৃতি স্তম্ভ রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উন্নয়ন করা হবে।